১১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটি রায়ে ১৭ বছরের স্বপ্ন পূর্ণ

  • রিপোর্টারের নাম
  • আপডেটের সময় : ০৩:৪৪:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১১২ টাইম ভিউ

ডেস্ক নিউজ :একটি রায়ে ভাগ্য খুলে গেল হাজারোর বেশি জনের। ১৭ বছর আগে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায় শুনেই আদালত কক্ষে থাকা নিয়োগ প্রত্যাশীদের অনেকেই খুশিতে কান্না শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে এজলাস কক্ষের বাইরে এসে বিষয়টি ফোনে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) একটি রিটের আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়টি দেন।

বিএসএস ক্যাডারে নিয়োগ পেতে যাওয়া ড. মাসুমা বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে আমরা সম্মানিত হয়েছি। বিএসএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আমরা কখনও অন্যায় করবো না।

নিয়োগ পেতে যাওয়া রাকিবুল ইসলাম বলেন, ১৭ বছর আমাদের জীবনের সঙ্গে অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজকে আপিল বিভাগ ন্যায় বিচার করেছেন। আমরা অত্যন্ত খুশি।

এদিকে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগ বঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরতের আপিল বিভাগের রায়কে ঐতিহাসিক বলছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন ও ব্যারিস্টার রুহুল কু্দ্দুস কাজল বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ পর আপিল বিভাগের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি ঐতিহাসিক রায়।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে ২৭তম বিসিএসের ১১৩৭ জন চাকরি ফেরত পেল। এটি জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজকে যারা বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরি ফেরত পেলেন তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

আইনজীবীরা বলেন, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সর্বোচ্চ আদালত আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২৭তম বিসিএসে নিয়োগ বঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনকে ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৮ জুন ২৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিপিএসসি। মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি। এই ফলাফলের ভিত্তিতে বিপিএসসি বিভিন্ন ক্যাডারে তিন হাজার ৫৬৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বিপিএসসি মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে তিনটি রিট আবেদন করেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ২০০৭ সালের ২২ জুলাই হাইকোর্ট বিপিএসসির সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

রুল জারির সাত দিন পর অর্থাৎ ২৯ জুলাই থেকে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে বিপিএসসি। শেষ হয় ২০০৮ সালের ১৮ মে। এর দেড় মাস পর ৩ জুলাই হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেন। রায়ে প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিলে বিপিএসসির সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের পর ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা করে বিপিএসসি।

এতে তিন হাজার ২৩৯ জন উত্তীর্ণ হন। কিন্তু প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক হাজার ১১৪ জন দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় আর উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে সাতটি রিট আবেদন করেন অনুত্তীর্ণরা। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর হাইকোর্ট দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর ও ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

ট্যাগ:

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে

একটি রায়ে ১৭ বছরের স্বপ্ন পূর্ণ

আপডেটের সময় : ০৩:৪৪:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ডেস্ক নিউজ :একটি রায়ে ভাগ্য খুলে গেল হাজারোর বেশি জনের। ১৭ বছর আগে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায় শুনেই আদালত কক্ষে থাকা নিয়োগ প্রত্যাশীদের অনেকেই খুশিতে কান্না শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে এজলাস কক্ষের বাইরে এসে বিষয়টি ফোনে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) একটি রিটের আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়টি দেন।

বিএসএস ক্যাডারে নিয়োগ পেতে যাওয়া ড. মাসুমা বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে আমরা সম্মানিত হয়েছি। বিএসএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আমরা কখনও অন্যায় করবো না।

নিয়োগ পেতে যাওয়া রাকিবুল ইসলাম বলেন, ১৭ বছর আমাদের জীবনের সঙ্গে অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজকে আপিল বিভাগ ন্যায় বিচার করেছেন। আমরা অত্যন্ত খুশি।

এদিকে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগ বঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরতের আপিল বিভাগের রায়কে ঐতিহাসিক বলছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন ও ব্যারিস্টার রুহুল কু্দ্দুস কাজল বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ পর আপিল বিভাগের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি ঐতিহাসিক রায়।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে ২৭তম বিসিএসের ১১৩৭ জন চাকরি ফেরত পেল। এটি জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজকে যারা বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরি ফেরত পেলেন তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখবেন, এটাই প্রত্যাশা করি।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

আইনজীবীরা বলেন, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সর্বোচ্চ আদালত আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২৭তম বিসিএসে নিয়োগ বঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনকে ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৮ জুন ২৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিপিএসসি। মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি। এই ফলাফলের ভিত্তিতে বিপিএসসি বিভিন্ন ক্যাডারে তিন হাজার ৫৬৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলার মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বিপিএসসি মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে তিনটি রিট আবেদন করেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ২০০৭ সালের ২২ জুলাই হাইকোর্ট বিপিএসসির সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

রুল জারির সাত দিন পর অর্থাৎ ২৯ জুলাই থেকে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে বিপিএসসি। শেষ হয় ২০০৮ সালের ১৮ মে। এর দেড় মাস পর ৩ জুলাই হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেন। রায়ে প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিলে বিপিএসসির সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের পর ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা করে বিপিএসসি।

এতে তিন হাজার ২৩৯ জন উত্তীর্ণ হন। কিন্তু প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক হাজার ১১৪ জন দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় আর উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে সাতটি রিট আবেদন করেন অনুত্তীর্ণরা। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর হাইকোর্ট দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর ও ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন।