০৪:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগদান না করলে পুলিশের চাকরি নেই –স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার চেয়ে মাঠে নেমেছিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলন দমাতে শুরু থেকেই মারমুখী ছিল পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়ন আর ধরপাকড়ে ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। কোটার আন্দোলন গিয়ে ঠেকে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ পুলিশ। থানা ও ট্রাফিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ সদস্যদের মারধর ও হত্যার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী— সংঘর্ষ ও হামলায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার নিহতের সংখ্যা চার শতাধিক।

সরকার পতনের পর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ছাত্র-জনতার রোষের মুখে পুলিশের অধিকাংশ সুবিধাবাদী ও সরকার বা আওয়ামী ঘেঁষা কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান। এদের কেউ কেউ এখন নজরদারিতে আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন ও সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে সর্বমহলে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও পুলিশকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, স্থাপনার ক্ষত না হয় সারানো যাবে, বিকল্প স্থাপনায় কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু সাধারণ পুলিশ সদস্যের মনে যে ট্রমা তৈরি হয়েছে, হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কতদিনে কাটবে সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক দিন ধরেই পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। মানবাধিকার সমুন্নত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়েই পুলিশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার পুলিশকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকল পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি রোববার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন।

এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না।

ট্যাগ:

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে

বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগদান না করলে পুলিশের চাকরি নেই –স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটের সময় : ১১:৩১:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার চেয়ে মাঠে নেমেছিল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলন দমাতে শুরু থেকেই মারমুখী ছিল পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়ন আর ধরপাকড়ে ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। কোটার আন্দোলন গিয়ে ঠেকে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ পুলিশ। থানা ও ট্রাফিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ সদস্যদের মারধর ও হত্যার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী— সংঘর্ষ ও হামলায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার নিহতের সংখ্যা চার শতাধিক।

সরকার পতনের পর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ছাত্র-জনতার রোষের মুখে পুলিশের অধিকাংশ সুবিধাবাদী ও সরকার বা আওয়ামী ঘেঁষা কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান। এদের কেউ কেউ এখন নজরদারিতে আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন ও সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে সর্বমহলে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও পুলিশকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, স্থাপনার ক্ষত না হয় সারানো যাবে, বিকল্প স্থাপনায় কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু সাধারণ পুলিশ সদস্যের মনে যে ট্রমা তৈরি হয়েছে, হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কতদিনে কাটবে সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক দিন ধরেই পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। মানবাধিকার সমুন্নত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়েই পুলিশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার পুলিশকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকল পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি রোববার (১১ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন।

এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাথার চামড়া খুলে ফেলা, হাত-পা-মাথা থেতলিয়ে ফেলা, এটা টলারেট করার মতো না। হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশ ও অন্যদের গুলিতে, এটাও দুঃখজনক। পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না।