০১:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মঙ্গলগ্রহে যাবে এলিজা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এই আবিষ্কারে ম্যারি কুরি এবং তাঁর স্বামী পেয়েরি কুরি এতটাই স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, এই পৃথিবী থেকে অচিরেই বিদায় নিতে হয়েছিল। এতদ্‌ব্যতীত এ ধরনের অনেক প্রতিভাধর সৃষ্টিধর্মী ও উদ্যোগী মহৎ প্রাণ, এই ভাবে পৃথিবী থেকে অকালেই চির বিদায় নিয়েছেন। যাঁরা হলেন রবার্ট ককিং, অটো লিলিয়েনথাল, অরেল ভিলাইকু, উইলিয়াম বুলোক, আলেকজান্ডার বগডানোভ, হেনরি থুআইল, ম্যাক্স ভ্যালিয়ার, প্রমুখ। এরা কেবল মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, এই সকল অধিমানব মানব জাতির মঙ্গলের জন্য আবিষ্কার করতে যেয়ে নির্দ্বিধায় জীবন দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, আমরা তাঁদের আবিষ্কারের ফল ভোগ করে চলেছি। অথচ তাঁদের কথা এতটুকু ভাবি না এবং মনেও রাখি না।

এবার আসুন আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয় এলিজা কার্সনের কথায় ফিরে আসি। এই ছোট মেয়েটি নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। ৭ বছর বয়সে বাবা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তাকে এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল যে তার ভাবনার জগৎটাই অন্য শিশুদের চাইতে আলাদা হয়ে যায়। এদিকে এলিজার যখন ৯ বছর বয়স, তখন তার সাথে দেখা হয় নাসার এক মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাসের সাথে। এই নারী মহাকাশচারী তাকে জানিয়েছিলেন যে ছোটবেলাতেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বলেই বর্তমানে এ অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন। এই কথাটি ছোট্ট এলিজার মনে দাগ কেটে যায়। এতে মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন তাঁর অন্তরে আরও শেকড় গেড়ে বসে। উল্লেখ্য যে, মাত্র ১২ বছর বয়সেই এলিজা আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেন। এর মধ্যে মহাকাশের বেসিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন কীভাবে পরিচালিত হয়, তা সে রপ্ত করে ফেলে। এক্ষেত্রে মহাকর্ষ-শূন্য স্থানে চলাচল করার পদ্ধতি, ভারহীন স্থানে থাকার উপায়, রবোটিক্স সম্পর্কে জ্ঞান এবং বিশেষ মুহূর্তে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা, ইত্যাদি অর্জন করে। মজার ব্যাপার হলো যে, তাঁর এই অভাবনীয় কাজের জন্য নাসার পক্ষ থেকে তাঁকে একটি ‘কল নেম’ও দেয়া হয়, যা হলো “ব্লুবেরি”।

যেহেতু সে মঙ্গলে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সোজা কথায় সে ফিরে আসতে চাইলেও আর আসতে পারবে না। তাই নাসার কাছে সে কোনো প্রকার যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রতে সাক্ষর করেছে। এদিকে অফিসিয়ালি নাসা ১৮ বছরের আগে কাউকে নভোচারী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয় না। তবে এলিজার ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। ১১ বছর বয়সেই তাকে মনোনীত করা হয়েছে। প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এলিজাকে মানুষের ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে অভিযানের জন্য জোর সমর্থন করে তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০৩৩ সালে যখন মঙ্গল গ্রহে প্রথমবার মানুষ পাঠানোর অভিযান শুরু হবে, তখন এলিজার বয়স হবে ৩২, যা একজন নভোচারীর জন্য যথাযথ বয়স। অবশ্য এলিজার মঙ্গলগ্রহে অভিযান নিয়ে নেতিবাচক কথাও শোনা যাচ্ছে। পরিশেষে এই বলে ইতি টানছি যে, সত্যই যদি ২০৩৩ সালে এলিজা মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। সেক্ষেত্রে প্রায় ৮ শত কোটি পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে আগাম মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আর অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, সে হয়ত আর এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে না। তথাপিও পৃথিবীবাসীর জন্য যে উদ্দেশ্যে যাচ্ছে, সেটা যেন পূরণ হয়। তাহলে তার আত্মা পরিপূর্ণতার শান্তিতে ভরে উঠবে।

মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত

সহায়ক সূত্রাদি:

০১। উইকিপিডিয়া

০২। অনলাইন নিউজ (ফুংসুখ ওয়াংরু)

০৩। বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৬/১১/২০২৩)

০৪। সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীজনের সঙ্গে আলোচনা

০৫। ইত্যাদি; ইত্যাদি।

ট্যাগ:

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে

নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মঙ্গলগ্রহে যাবে এলিজা

আপডেটের সময় : ১০:২০:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এই আবিষ্কারে ম্যারি কুরি এবং তাঁর স্বামী পেয়েরি কুরি এতটাই স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, এই পৃথিবী থেকে অচিরেই বিদায় নিতে হয়েছিল। এতদ্‌ব্যতীত এ ধরনের অনেক প্রতিভাধর সৃষ্টিধর্মী ও উদ্যোগী মহৎ প্রাণ, এই ভাবে পৃথিবী থেকে অকালেই চির বিদায় নিয়েছেন। যাঁরা হলেন রবার্ট ককিং, অটো লিলিয়েনথাল, অরেল ভিলাইকু, উইলিয়াম বুলোক, আলেকজান্ডার বগডানোভ, হেনরি থুআইল, ম্যাক্স ভ্যালিয়ার, প্রমুখ। এরা কেবল মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, এই সকল অধিমানব মানব জাতির মঙ্গলের জন্য আবিষ্কার করতে যেয়ে নির্দ্বিধায় জীবন দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, আমরা তাঁদের আবিষ্কারের ফল ভোগ করে চলেছি। অথচ তাঁদের কথা এতটুকু ভাবি না এবং মনেও রাখি না।

এবার আসুন আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয় এলিজা কার্সনের কথায় ফিরে আসি। এই ছোট মেয়েটি নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। ৭ বছর বয়সে বাবা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তাকে এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল যে তার ভাবনার জগৎটাই অন্য শিশুদের চাইতে আলাদা হয়ে যায়। এদিকে এলিজার যখন ৯ বছর বয়স, তখন তার সাথে দেখা হয় নাসার এক মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাসের সাথে। এই নারী মহাকাশচারী তাকে জানিয়েছিলেন যে ছোটবেলাতেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বলেই বর্তমানে এ অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন। এই কথাটি ছোট্ট এলিজার মনে দাগ কেটে যায়। এতে মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন তাঁর অন্তরে আরও শেকড় গেড়ে বসে। উল্লেখ্য যে, মাত্র ১২ বছর বয়সেই এলিজা আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেন। এর মধ্যে মহাকাশের বেসিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন কীভাবে পরিচালিত হয়, তা সে রপ্ত করে ফেলে। এক্ষেত্রে মহাকর্ষ-শূন্য স্থানে চলাচল করার পদ্ধতি, ভারহীন স্থানে থাকার উপায়, রবোটিক্স সম্পর্কে জ্ঞান এবং বিশেষ মুহূর্তে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা, ইত্যাদি অর্জন করে। মজার ব্যাপার হলো যে, তাঁর এই অভাবনীয় কাজের জন্য নাসার পক্ষ থেকে তাঁকে একটি ‘কল নেম’ও দেয়া হয়, যা হলো “ব্লুবেরি”।

যেহেতু সে মঙ্গলে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সোজা কথায় সে ফিরে আসতে চাইলেও আর আসতে পারবে না। তাই নাসার কাছে সে কোনো প্রকার যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রতে সাক্ষর করেছে। এদিকে অফিসিয়ালি নাসা ১৮ বছরের আগে কাউকে নভোচারী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয় না। তবে এলিজার ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। ১১ বছর বয়সেই তাকে মনোনীত করা হয়েছে। প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এলিজাকে মানুষের ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে অভিযানের জন্য জোর সমর্থন করে তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০৩৩ সালে যখন মঙ্গল গ্রহে প্রথমবার মানুষ পাঠানোর অভিযান শুরু হবে, তখন এলিজার বয়স হবে ৩২, যা একজন নভোচারীর জন্য যথাযথ বয়স। অবশ্য এলিজার মঙ্গলগ্রহে অভিযান নিয়ে নেতিবাচক কথাও শোনা যাচ্ছে। পরিশেষে এই বলে ইতি টানছি যে, সত্যই যদি ২০৩৩ সালে এলিজা মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। সেক্ষেত্রে প্রায় ৮ শত কোটি পৃথিবীবাসীর পক্ষ থেকে আগাম মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আর অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, সে হয়ত আর এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে না। তথাপিও পৃথিবীবাসীর জন্য যে উদ্দেশ্যে যাচ্ছে, সেটা যেন পূরণ হয়। তাহলে তার আত্মা পরিপূর্ণতার শান্তিতে ভরে উঠবে।

মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত

সহায়ক সূত্রাদি:

০১। উইকিপিডিয়া

০২। অনলাইন নিউজ (ফুংসুখ ওয়াংরু)

০৩। বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৬/১১/২০২৩)

০৪। সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীজনের সঙ্গে আলোচনা

০৫। ইত্যাদি; ইত্যাদি।